Covid-19 যে আমাদের অতি পরিচিত বিজনেস ওয়ার্ল্ডে একটা paradigm shift আনতে যাচ্ছে সেটা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। পোস্ট কোভিড দুনিয়াতে এখন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে যে বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে সেটি হচ্ছে - ‘কিভাবে আমি আপনি এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে সারভাইব করতে পারি?’
এর আগের লেখাগুলোতে আমি বেশ কিছু মার্কেটিং এবং বিজনেস স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো বর্তমান সিচুয়েশনে এবং ভবিষ্যতের জন্যও ইফেক্টিভ হতে পারে।
কিন্তু আজকে আরেকটি অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের আলোচনার টপিক। আর সেটি হচ্ছে - Digital Transformation for Business Growth.
বিজনেসের জন্য ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন বলতে কি বোঝায়?
আলোচনার সুবিধার্থে প্রথমেই চলুন "Digital Transformation" কে ডিফাইন করি -
“ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন হচ্ছে বিজনেসের প্রতিটি ক্ষেত্রে টেকনোলোজি ব্যবহার করে ভিন্নতর উপায়ে বিজনেস করা; যার ফলে বিজনেস ফান্ডামেন্টালি বদলে যাবে, কাস্টোমারকে নতুন ভ্যালু প্রোভাইড করবে এবং এক্সাইটিং মার্কেট গ্রোথ নিয়ে আসবে।”
রিসেন্টলি MIT এর একটি স্টাডিতে পড়ছিলাম - যেসব কোম্পানি digital transformation কে সাদরে গ্রহণ করেছে তারা তাদের কম্পিটিটরদের তুলনায় 26% বেশি profitable!
মাইক্রোসফট, Best Buy, Nike, Target এর মতো কোম্পানিগুলো বিগত বছরগুলোতে প্রায় 2-7 বছর সময় নিয়ে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন করেছে এবং এতে স্টক প্রাইসের গ্রোথ হয়েছে 53% থেকে 258%।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে এই স্টাডিটা কিন্তু করোনা মহামারীর আগের। বর্তমান সিচুয়েশনে বিজনেস সারভাইবাল এবং গ্রোথের নিশ্চিত করতে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অত্যন্ত অত্যন্ত অত্যন্ত জরুরী।
এই আর্টিকেলে আমরা সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ Digital Transformation স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা করবো, বিশ্বের নামকরা কোম্পানীগুলো কিভাবে ইমপ্লিমেন্ট করছে সেগুলো দেখবো, এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি আপনি কিভাবে আপনার কোম্পানিতেও সহজে এই স্ট্রাটেজিগুলো ইমপ্লিমেন্ট করতে পারেন সেগুলো পয়েন্ট আউট করবো।
Digital Transformation কাদের জন্য প্রযোজ্য?
ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন যে শুধুমাত্র বড় বড় কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। সঠিক Digital Transformation Roadmap ব্যবহার করে স্টার্টআপ, SME থেকে শুরু করে ফরচুন 500 এর মতো কোম্পানিও বিজনেসে গ্রোথ নিয়ে আসতে পারে।
আবার শুধু বিজনেসগুলোই যে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন নিয়ে চিন্তা করবে তেমনটাও কিন্তু না।
United Nations এবং World Trade Organization এর মত অর্গানাইজেশনও তাদের সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (SDG) এর এজেন্ডাতে রেখেছে Digital Transformation, এবং তারা বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে কাজ করে চলছে।
বাংলাদেশেও কিন্তু জাতিসংঘের অধীনস্ত ITC এর SheTrades Commonwealth প্রোগ্রাম "Digital Transformation" প্রজেক্টের মাধ্যমে অনেক SME দেরকে ট্রেইনিং এবং মেন্টরশীপ প্রদান করছে।
IBA(DU) এর এসোসিয়েট প্রফেসর Saif Noman Khan স্যার এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে Sapien Strategy Consulting পরিচালিত United Nations এর এরকম একটি গ্লোবাল প্রজেক্টের ট্রেইনার এবং মেন্টর হিসেবে বিভিন্ন SME বিজনেসের সাথে আমার নিজেরও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। উল্লেখ্য যে এই বিজনেসগুলোর অনেকেরই কিন্তু আমাদের ট্রেইনিং এর আগে ডিজিটাল প্রেজেন্সই ছিল না।
অপরপক্ষে বাংলাদেশের টপ দশটির একটি Group of Companies এর Owner কিছুদিন আগে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন এবং ডিজিটাল স্ট্রাটেজি নিয়ে কাজ করার জন্য আমার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করছিলেন। প্রায় আশি বছর ধরে ট্রেডিশনাল বিজনেস করে আসা কোম্পানির এই futuristic vision বাকী সবার জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।
সুতরাং এক কথায় বলতে গেলে - সময়ের প্রয়োজনে যে কোন ইন্ডাস্ট্রির যে কোন সাইজের বিজনেসেরই এখন সময় এসেছে Digital Transformation কে টপ প্রায়োরিটি দেয়া।
Digital Transformation Focus Ares
ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন স্ট্র্যাটেজি ডিমান্ড এবং চ্যালেঞ্জ এর উপর নির্ভর করে কোম্পানি থেকে কোম্পানি তে ভ্যারি করতে পারে। তবুও কিছু কমন এরিয়া রয়েছে যেগুলো প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
আমি এই লেখাতে বিজনেসে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন এর পাঁচটি প্রধান এরিয়া নিয়ে বিস্তারিত ডিসকাস করবো যেগুলো আমার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ন বলে মনে হয়েছেঃ
- কাস্টোমার এক্সপেরিয়েন্স (Customer Experience)
- বিজনেস মডেল (Business Model)
- বিজনেস প্রসেস (Business Process)
- MarTech এবং ডিজিটাল মার্কেটিং
- কালচার এবং হিউম্যান রিসোর্স (Culture & Human Resource)
চলুন একটা একটা করে এরিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
১। কাস্টোমার এক্সপেরিয়েন্স (Customer Experience)
ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এর কেন্দ্রবিন্দুতে যেটাকে রাখা আবশ্যক তা হচ্ছে - Seamless Customer Experience.
ট্রেডিশনাল অনেক বিজনেসের মতো ‘The Happiest Place on Earth’ নামে পরিচিত বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড Disney ও দিন দিন কাস্টোমার স্যাটিসফেকশন এবং রেভিনিউ ড্রপ দেখছিল। এর থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য তারা তৈরি করে Disney Digital Transformation Roadmap.
ডিজনীর One Billion Dollar এর এই রোডম্যাপ এর সেন্টারপিস হচ্ছে Custom RFID MagicBands wristband, যেটা গেস্টদেরকে seamless এবং friction-less এক্সপেরিয়েন্স দিতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও ডিজনীর হলিস্টিক ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন এর মধ্যে রয়েছে DisneyWorld.com ওয়েব পোর্টাল এর পুরোপুরি রিডিজাইন, 30 মিলিয়ন স্কয়ার ফিটের পুরো ডিজনি পার্কে WiFi কাভারেজ ইত্যাদি ইত্যাদি।
শুধুমাত্র ডিজনীর মতো B2C না, B2B কোম্পানিগুলোও ডিজিটাল ট্রান্সফর্মশেন এর দ্বারা কাস্টোমারের এক্সপেরিয়েন্স আমূল বদলে দিতে পারে। উদাহরণস্বরুপ আপনি যদি B2B তে থাকেন তাহলে সেলস টিমকে ট্রেইনাপ করতে পারেন Cold Calling এর বদলে LinkedIn এর মতো মতো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ব্যাবহার করে Social Selling করতে।
(Sujan Patel এর ‘The Customer Delight Playbook’ টি কাস্টোমার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন এর জন্য একটা অসাধারণ রিসোর্স, Google করে নামিয়ে নিতে পারেন)
Hassle Free Service
সোশ্যাল আইসোলেশন এর দুনিয়াতে কাস্টোমারদের চাহিদা কাস্টোমাইজড প্রোডাক্ট, ঝুকিবিহীন শপিং এর নিশ্চয়তা, দ্রুত ডেলিভারি, ইজি রিটার্ন বা রিফান্ড পলিসি ইত্যাদি। তাইতো Amazon এর হিউম্যান-কন্টাক্টলেস ড্রোন ডেলিভারি প্রজেক্ট এখন টপ প্রায়োরিটি, আর সেই সাথে তাদের মাইন্ডব্লোয়িং রিফান্ড পলিসি তো রয়েছেই।
আনফরচুনেটলি উপরে উল্লেখিত বেশিরভাগই আমাদের দেশে অনুপস্থিত, স্পেশালি রিফান্ড পলিসি। অধিকাংশ বিজনেসই কাস্টোমারের টাকা কোনভাবে একবার পকেটে ঢুকলে 'পাইছি রে পাইছি' টাইপ একটা এটিচিউড নিয়ে ফেলে এবং কোন অবস্থাতেই রিফান্ড করতে চায় না। এর ফলে লং টাইম লয়াল কাস্টোমার তৈরীর সুবর্ণ সুযোগ হারায়, এবং Customer Lifetime Value ও বৃদ্ধি পায় না।
বর্তমান বিশ্বের হাইয়েস্ট পেইড মার্কেটিং কনসালটেন্ট এবং স্ট্রাটেজিস্ট Jay Abraham এর Risk Reversal নামক একটি বিখ্যাত স্ট্র্যাটেজি রয়েছে।
জে আব্রাহাম এর ভাষায় - “When you take away the risk to your prospect or client, you lower the barrier to action, thus eliminating the primary obstacle to buying. And that's what you must do.”
বাংলাদেশে বেশিরভাগ ইকমার্স কোম্পানিই দেখি প্রথম দিনে থেকেই Everything Store ‘Amazon’ হতে চায়! অথচ Jeff Bezos তার বায়োগ্রাফিতে বিস্তারিত বলেছেন কিভাবে শুধুমাত্র একটা প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি (বই) দিয়ে আগে পুরোপুরি অপারেশনাল এফিসিয়েন্সি এবং কাস্টোমার স্যাটিসফেকশন নিশ্চিত করার পরেই তারা ক্যাটাগরি এক্সটেনশন করেছে।
আমি তাই ইকমার্স উদ্যোক্তাদের Zappos এর CEO Tony Hsieh এর লেখা বই ‘Delivering Happiness’ পড়তে উৎসাহিত করি। কাস্টোমার এক্সপেরিয়েন্স যাদের বিজনেসের মূলমন্ত্র। ইভেন শেষ পর্যন্ত Amazon নিজেই Zappos কে কিনে নিয়েছে $1.2 Billion দিয়ে। সবাই এমাজন হতে না চেয়ে কেউ কেউ Zappos হবার চেষ্টা করলে দেশের ইকমার্স ইন্ডাস্ট্রি এতদিনে আরো অনেক ডেভেলপ করতো!
রিসেন্টলি ‘The Curious Case of Evaly’ মিনি কেইস স্টাডিতে আমি এনিয়ে আরো বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং বিষয় লিখেছিলাম, আগে না পড়ে থাকলে অবশ্যই পড়বেন।
(বাই দা ওয়ে, ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন মানেই কিন্তু শুধু ইকমার্স না। বিজনেস মডেল এরিয়া তে এব্যাপারে খুব ইম্পর্টান্ট কিছু ডিসকাসন করবো)
Data-Driven Customer Experience
ডাটা এবং এনালিটিক্স এর মাধ্যমে অনেক বেশি ডায়নামিক, রেসপন্সিভ এবং পার্সোনালাইজড কাস্টোমার সার্ভিস প্রদান করা সম্ভব।
Amazon এবং Netflix এর মতো কোম্পানিগুলো ডাটা এনালিটিক্স একদম লিজেন্ডারি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন এদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর থেকে প্রতিটা মূহুর্তে কিভাবে পার্সোনালাইজড রেকমেন্ডেশন দিতে থাকে।
এর পিছনে এই কোম্পানিগুলোর আনবিলিভেবল ডাটা এনালিটিক্স এবং ডিসিশন মেকিং ক্ষমতা কাজ করছে। এর মাধ্যমে অ্যামাজন যেমন তার শপিং কার্টের ভ্যালু বাড়িয়ে নিচ্ছে, তেমনি Netflix ও আমাকে আপনাকে binge-watch এ বাধ্য করছে (সিরিজ রেকমেন্ডশন - নেটফ্লিক্সের ‘How to sell drugs online (fast)’ সিরিজটা ট্রাই করতে পারেন)!
আশার ব্যপার হচ্ছে, বাংলাদেশেও অনেক কোম্পানিতে (স্পেশালি স্টার্টআপে) আমরা কিন্তু যথেষ্ট ডাটা এনালিটিক্স এর ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। যেমন রাইড শেয়ারিং কোম্পানি Pathao শুরু থেকেই তাদের প্রাইসিং, কাস্টোমাইজড অফার বেইজড অন ইউজার বিহেভিয়ার এগুলোর মাধ্যমে বাইক রাইডিং এ মার্কেট শেয়ার বাড়িয়ে নিয়েছিল উবার এর মতো কম্পিটিটর থাকা সত্ত্বেও।
Omni-channel Customer Experience Through Digital Channels
Omnichannel কাস্টোমার এক্সপেরিয়েন্স বলতে মাল্টিপল টাচপয়েন্টে unified এবং consistent ওয়েতে কাস্টোমারকে সার্ভিস এবং এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করা বোঝায়।
ডিজিটাল কাস্টোমার সার্ভিস কাস্টোমারের ফোন কল, ইমেইল বা মেসেজ এর অপেক্ষায় বসে না থেকে proactively তাদের সমস্যার সমাধান করবে। এর জন্য ওয়াইড রেইঞ্জ অফ সাপোর্ট চ্যানেল ব্যবহার করতে হবে যেমন - Social media community and groups, রিভিউ সাইট এবং ফোরাম, ওয়েবসাইটের FAQ সেকশন ইত্যাদি ইত্যাদি।
Forbes এর স্ট্যাটিসটিক্স অনুযায়ী - যেসব কোম্পানী strong omnichannel experience দিতে পারে তারা 89% কাস্টোমার retain করতে সমর্থ্য হয়, যেখানে weak এক্সপেরিয়েন্স দিলে মাত্র 33% রিটেনশন হয়।
Decision Time
ক্রমবর্ধমান টেকনোলজি এর দুনিয়াতে অনেক বিজনেসই Data Science, Artificial Intelligence, Internet of Things, Blockchain, Big Data, Augmented Virtual Reality ইত্যাদির আলোচনার ভিড়ে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে কি করবে আর কি করবে না ভেবে।
কিন্তু আমি আপনাকে সাজেশন দেব এত কিছু নিয়ে টেনশন না করে মোস্ট বেসিক এবং প্রাইমারী ডিজিটাল টেকনোলোজি গুলোর পূর্ণ সদ্বব্যবহার করার জন্য। যেমন - Strong Social Media and Digital Presence, Solid Digital Strategy, Data Analytics ইত্যাদি।
এখানে মূল কথাটা হলো আপনার বিজনেসে ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহার করে কাস্টোমারের জার্নিটাকে অপটিমাইজ করতে হবে এবং হ্যাসল ফ্রী করতে হবে। বেসিক স্ট্রং হলে তারপর ধীরে ধীরে এডভান্সড ডিজিটাল স্ট্রাটেজিগুলো এডাপ্ট করতে পারবেন।