বদলে যাওয়া এই ডিজিটাল দুনিয়াতে প্রতিটা বিজনেসকে শিখতে হবে কিভাবে ডিজিটাল স্পেসে কাস্টোমারের মাইন্ডে একটি স্ট্রং positioning তৈরি করে নেয়া যায়। অসংখ্য distraction, অতিস্বল্প attention span, ছোট-বড় হাজারো কোম্পানির মার্কেটিং মেসেজ সম্বলিত noisy ডিজিটাল স্পেসে কাস্টোমারের মন জয় করার চেষ্টা এখন যুদ্ধেরই সমতুল্য।
বাংলাদেশে জনসংখ্যার 41% (6.65 কোটি) এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, আর একটিভ সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার রয়েছে 22% (3.6 কোটি)। এই সুবিশাল ইন্টারনেট ইউজারদের মাইন্ডে নিজের ব্র্যান্ড কে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেটা ফিগার আউট করতে পারাটা তাই আমাদের ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স দের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
কিন্তু ডিজিটাল স্পেসে আমাদের পদচারণা অপেক্ষাকৃত নতুন হওয়ার কারণে এক্সপেরিয়েন্স, লার্নিং এবং দক্ষতারও প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে এসব নিয়ে প্রচুর কেইসস্টাডি বা ডাটা থাকলেও সেগুলো অনেক সময় আমাদের সোশ্যাল কনটেক্সট এ রেলিভ্যান্ট হয় না। আনফরচুনেটলি আমাদের দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো নিয়ে তেমন একটা রিসার্চ বা কেইস স্টাডি পাওয়া যায় না।
আমাদের ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স এবং বিজনেসগুলোর সুবিধার্থে তাই ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং, স্ট্র্যাটেজি ইত্যাদি নিয়ে কিছু series of case studies লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু - কিভাবে ডিজিটাল স্পেসে কাস্টোমারের মাইন্ড জয় করার যুদ্ধে জয়লাভ করা যেতে পারে। আর এই আলোচনার সুবিধার্থে আমরা কেইস স্টাডি হিসেবে নিয়েছি দেশের অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড Grameenphone এর রিসেন্ট একটা সাড়া তোলা ডিজিটাল ক্যাম্পেইনঃ ‘ইন্টারনেটের দুনিয়ায় জানতে হবে, কোথায় আপনার থামতে হবে’।
গ্রামীনফোন ক্যাম্পেইনঃ ইন্টারনেটের দুনিয়ায় জানতে হবে, কোথায় আপনার থামতে হবে
গত বছর (2019) এর নভেম্বরে গ্রামীনফোন তাদের ব্র্যান্ড এম্ব্যাসেডর Tahsan কে দিয়ে প্রথম উপরের শিরোনামে একটি awareness campaign তৈরি করে। সমসায়িক কিছু ঘটনাবলীর প্রভাবে এবং ওভারঅল ক্যাম্পেইনটির পাওয়ারফুল মেসেজে ক্যাম্পেইনটি viral হয়ে যায় (আমি সেই সময় এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স গ্রুপে, পড়ে দেখতে পারেন)।
Well, a lot of things changed in one year!
কোভিড-১৯ গ্লোবাল প্যান্ডেমিক এবং সোশ্যাল ডিসটান্সিং আমাদেরকে আরো অনেক বেশি ডিজিটাল মিডিয়া মুখি করে তুলেছেন এই একবছরে। এবং আনফরচুনেটলি, সোস্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের মিসইউজও সবচেয়ে বেড়ে গিয়েছে এই সময়ে।
স্পেশালি নারী এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদেরকে cyber bullying, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে টুইস্ট করে ক্ষতিকর সব গুজব, অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ ইত্যাদি ইত্যাদি আমাদের সোসাইটিকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। সাজানো গোছানো সোশ্যাল প্রোফাইলের আড়ালে মুখোশধারী অসংখ্য মানুষ বিচরণ করে বেড়াচ্ছে ইন্টারনেটের আনাচে কানাচে।
এখন সমস্যা হচ্ছে সাইবার ক্রাইম লেভেলের ইস্যুগুলোকে হয়তো ICT এক্ট করে দমন করার চেষ্টা করা যায়, কিন্তু আমরা নিজেদের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ইন্টারনেটে যে inappropriate behavior করে চলেছি সেগুলোর প্রতিকার কিভাবে করা সম্ভব?
প্রায়ই দেখা যায় আমরা নিজেরা কিছু না চিন্তা করেই অনেক Meme বানিয়ে ছেড়ে দেই কিংবা শেয়ার করি যা কিনা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে কষ্ট দেয় , যাচাই না করেই অন্যদের inbox এ ভুল তথ্য পাচার করে দেই, সোশ্যাল মিডিয়াতে পাবলিকলি কাউকে কেন্দ্র করে অবাঞ্ছিত কমেন্ট করে বসি, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে পাবলিক ফোরামে অসম্মানজনক কথা বলে তর্ক করি … ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই কাজগুলো কি আমি বা আপনি অনলাইনে না হয়ে অফলাইনে হলে আমাদের বন্ধু-বান্ধবী, রিলেটিভ, সিনিয়র ভাই বোন বা আঙ্কেল আন্টির সাথে সামনা সামনি করতে পারতাম?
Grameenphone as a Brand Stepping in
46.18% মার্কেট শেয়ার এবং সাড়ে সাত (7.5) কোটির উপর একটিভ ইউজার (সূত্রঃ ডেইলি স্টার, জানুয়ারী, 20) থাকা গ্রামীনফোণ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডার এবং অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড।
লিডিং মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার একটা telco কোম্পানির মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন হতে বলাটা একদিকে কিছুটা counterproductive মনে হতে পারে। কিন্তু আরেকদিকে একটা Socially Responsible Company হিসেবে এবং দেশের সব মানুষের কাছেই ইন্টারনেটের ব্যবহারে সচেতনতা বিষয়ক একটা গ্রহণযোগ্য মেসেজ পৌছে দেবার ক্যাপাসিটির দিক থেকে গ্রামীনফোন পুরোপুরি উপযুক্ত।
তাই এবার একটু ব্যতিক্রম ধর্মী, একটা নয়, পাঁচটি ডিফরেন্ট awareness raising ভিডিও নিয়ে তারা আবার ক্যাম্পেইন লঞ্চ করলো ইন্টারনেটের সচেতনতা বিষয়ে (Link এ ভিডিও গুলোর লিঙ্ক দিয়ে দিলাম, না দেখে থাকলে আগে দেখে নিতে পারেন)।
প্রতিটা ভিডিওর মেসেজ একদম crystal clear : অফলাইনের মতো অনলাইনেও কি করা যাবে আর কি করা যাবে না সেটা আমাদেরকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং inappropriate বিহেভিয়ার থামাতে হবে।
আমার ফাইন্ডিংস অনুযায়ী, প্রতিটা ভিডিও মোটামুটি ৩-৪ মিলিয়ন টাইম ভিউ হয়েছে শুধুমাত্র Grameenphone এর ফেইসবুক পেইজে, অর্থাৎ FB পেইজে টোটাল ২০ মিলিয়ন ভিউ। এছাড়াও ইউটিউব, আনপাবলিশড এড ইত্যাদি তো আছেই।
যারা নিজেদের বা কোম্পানির বিজনেস ফেইসবুক পেইজ মেইনটেইন করেন তারা জানেন একটা ভিডিও রিলিজ করার পর ভিউ এর থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে audience response, স্পেশালি কমেন্ট সেকশনে এবং অর্গানিক ডিসকাশনে। বাংলাদেশে আমরা খুব ভাল ভাল উদ্যোগও হারিয়ে যেতে বা তীব্র বিরোধিতার শিকার হতে দেখেছি অবাঞ্ছিত এবং সুযোগসন্ধানী অনেক গোষ্ঠীর কাছ থেকে।
তাই একটা ক্যাম্পেইজ রিলিজ করলে ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিশনার্স দের প্রথম চিন্তাটাই থাকে ইনিশিয়ালি অডিয়েন্স কিভাবে একটা রিসিভ করে এবং কিভাবে রিএক্ট করে। ওভারওল ভিউ, কমেন্ট এবং অন্যান্য পজিটিভ ডিসকাশন থেকে আমরা ধরে নিতে পারি গ্রামীনফোন এর এই ক্যাম্পেইনটা তার লক্ষ্য অর্থাৎ awareness raising এ সফল হয়েছে।
অনেকক্ষণ সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি নিয়ে কথাবার্তা বললাম, এবার চলুন দেখি এটা কিভাবে গ্রামীনফোনকে Digital Scope এ একটা positioning তৈরি করতে হেল্প করেছে এবং কিভাবে এর থেকে লার্নিং নিয়ে আপনি আপনার বিজনেসে কাজে লাগাতে পারেন।
Something that GP has never done before
এর আগে গ্রামীনফোনের অনেক ভাল ভাল ক্যাম্পেইন আমরা দেখেছি, সেই ছোটবেলায় দেখা চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ‘মা’ TVC এখনও মনে দাগ কেটা আছে। কিন্তু আমাদের আলোচিত ক্যাম্পেইনটা তাদের আগের সমস্ত ক্যাম্পেইন থেকে কিছুটা আলাদা। নিচে কিছু key পয়েন্ট আলোচনা করছিঃ
1. Thumbstopper Type 20 sec videos:
এর আগে গ্রামীনফোন কখনো জাস্ট 20 সেকেন্ডের কোন ভিডিও ক্যাম্পেইন রিলিজ করেনি। এবারের ভিডিও গুলো ছিল thumbstopper টাইপ - যেখানে একটা strong emotional core কে কেন্দ্র করে একটা short-form (সাধারণত 10 সেকেন্ড) ভিডিও তৈরি করা হয় যার মাধ্যমে ব্র্যান্ড কোন একটা story তুলে ধরে। বেশ কিছু রিসার্চের ফাইন্ডিংস অনুযায়ী এভারেজ human attention span এখন 8 (eight) সেকেন্ড, যা কিনা কিনা Goldfish এর থেকেও এক সেকেন্ড কম! এই ভিডিওগুলোর grand opening, ভিজুয়াল, স্টোরি টেলিং, surprise element সব কিছুই এই less-than-goldfish-attention গ্রাবিং করার জন্য যথেষ্ট।
2. Social Media Only
গ্রামীনফোন সহ বড় বড় কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগ ক্যাম্পেইনই ট্রেডিশনাল এবং ডিজিটাল সব মিডিয়াই কাভার করতে চেষ্টা করে। এর ফলে রিচ, ইফেক্টিভনেস, বাজেট অপটিমাইজেশন সবকিছুই বেটার হয়। কিন্তু এই ক্যাম্পেইনটি GP শুধুমাত্র অনলাইনে সীমাবদ্ধ রেখেছে, TVC তে যায় নি। এর অন্যতম প্রধান কারণঃ ভিডিও এর মেসেজগুলো যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং দেখছে তাদের জন্য যতটা রেলিভ্যান্ট mass people এর কাছে ততটা রেলিভ্যান্ট নাও হতে পারে (এবং মেসেজটা একটু স্ট্রং ও বটে)। কিন্তু ডিজিটাল স্পেসে আমরা যারা রয়েছি তাদের মাইন্ডে GP কিছুক্ষণের জন্য হলেও খুব মূল্যবান একটা স্পেইস দখল করে নিয়েছে।
3. Use of Reverse-psychology
মাত্র 20 সেকেন্ডের ভিডিওগুলোতে খুব ক্র্যাফটফুলি reverse-psychology টেকনিক ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম 12-13 সেকেন্ডে যে desired বিহ্যাভিয়ারটা মানুষের কাছে আশা করা হচ্ছে তার উল্টোটা দেখিয়ে এর অপকারিতা বোঝানো হয়েছে। ছোট্ট এই ভিডিওগুলোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত Surprise element এর উপযুক্ত ব্যবহার করে social awareness তৈরির পদ্ধতি যথেষ্ট ইফেক্টিভ বলেই প্রতিফলিত হচ্ছে।
4. Series of Videos
যেহেতু thumbstopper টাইপ ভিডিও, একটা স্পেসিফিক স্টোরি বা এক্সাম্পল একটা ভিডিওতে দেখানো হয়েছে এবং এরকম পাঁচটা ভিডিওর একটা সিরিজ ক্রমান্বয়ে রিলিজ করা হয়েছে। প্রতিটা ভিডিও আগের ভিডিওর কোর মেসেজ কে resonate করে এবং বিলিভ সিস্টেমটাকে আরো stronger করে, সেই সাথে recall করতেও সহায়তা করে।
Winning the Battle for Customers’ Mind
Al Ries এবং Jack Trout তাদের বিশ্ববিখ্যাত ক্লাসিক “Positioning: The Battle for Your Mind” বই, যা কিনা 20-megaton bomb এর মতো পুরো মার্কেটিং দুনিয়াকে কাপিয়ে দিয়েছিল, সেখানে লিখেছিলেনঃ
"THE BASIC APPROACH OF POSITIONING IS NOT TO CREATE SOMETHING NEW AND DIFFERENT, BUT TO MANIPULATE WHAT'S ALREADY UP THERE IN THE MIND, TO RETIE THE CONNECTIONS THAT ALREADY EXIST." - AL RIES
অনেক কোম্পানিই Brand Positioning তৈরির এই এপ্রোচটা বুঝতে ব্যর্থ হয়, চেষ্টা করে কমপ্লিটলি নতুন কোন কিছু তৈরি করার। কিন্তু ব্র্যান্ড পজিশনিং তৈরির জন্য প্রয়োজন কাস্টোমারের মাইন্ডে আপনার কোম্পানি সম্পর্কে যে perception আছে সেটাকে সঠিক রাস্তায় পরিচালিত করা, শক্তিশালী করা।
গ্রামীনফোন নিজেদের ব্র্যান্ডকে এভাবে ডিফাইন করে, “Grameenphone is here to inspire. We provide the power of digital communication, enabling everyone to improve their lives, build societies and secure a better future for all.”
মনে রাখতে হবে brand building একটা লং টার্ম গেইম। শুধু ডিফাইন না, GP ট্রেডিশনাল এর পাশাপাশি ডিজিটালিও ডিফরেন্ট এক্টিভিটি এর মাধ্যমে উল্লেখিত ভ্যালুগুলো বছরের পর বছর কন্টিনিউয়াসলি প্রোভাইড করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যার ফলে তারা কাস্টোমারের মাইন্ডেও একটা সুপারস্ট্রং brand হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে।
Let’s Prepare for the Battle of Mind!
এই ultra-digital যুগে প্রতিটা বিজনেস, স্টার্টআপ থেকে conglomerate কেই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করতে হবে কিভাবে নিজেদের ক্যাপাসিটি এবং রিসোর্স সবটুকু কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল স্পেসগুলোতে অন্যদের থেকে differently stand out করা যায়, story telling এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে কিভাবে কাস্টোমারের সাথে আরো বেশি connected হওয়া যায় এবং সর্বোপরি কাস্টোমারের মাইন্ডে একটা স্ট্রং brand positioning তৈরি করা যায়।
Kudos to the Grameenphone team and Agency ‘Magnito Digital’ for this awareness campaign, and special thanks to Sabbir Ahmed vai for providing me the valuable info needed for this case study!
আমার ইচ্ছে আছে সময় পেলে নেক্সট কয়েক মাসে ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং এবং স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আরো বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং কেইস স্টাডি লিখবো। আমরা নিজেদের মধ্যে এনালাইসিস এবং ডিসকাস করে পারি একসাথে গ্রো করতে এবং বেটার ব্র্যান্ড বিল্ড করতে। সকল বিজনেস লিডার এবং ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স দেরকে তাই আহবান জানাচ্ছি এই উদ্যোগে কন্ট্রিবিউট করতে।