গত কিছুদিন ধরে ব্র্যান্ড পাড়ায় জমজমাট আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের একটা ফেইসবুক পোস্ট নিয়ে।
৯ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সাকিব তার ফেইসবুক ভেরিফাইড পেইজ থেকে করা পোস্টাতে লিখেছিলেন, ‘বুঝতে পারছি না, আমার জুতা বেশি সুন্দর নাকি ফ্লোর? আপনাদের কি মনে হয়?’

বোঝাই যাচ্ছিল এটা সম্ভবত কোন টাইলসের বিজ্ঞাপন। পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর, রবিবার DBL Ceramics সাকিব কে তাদের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে ইন্ট্রোডিউস করে।
এই কয়দিন ধরে ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিশনার্সরা সাকিবের এই এনডোর্সমেন্ট এর effectiveness, কন্টেন্ট, মেসেজ, কপিরাইটিং ইত্যাদি নিয়ে কাঁটাছেড়া করছেন।
কিছুদিন আগে বিশ্বের অন্যতম সেরা এডভার্টাইজিং এজেন্সি Ogilvy এর Chief Creative Officer (Worldwide) এবং ইন্ডিয়া শাখার Executive Chairman পীযূশ পান্ডের বই ‘Pandeymonium: Piyush Pandey On Advertising’ পড়ছিলাম।
সাকিব এবং সেলিব্রিটিদের নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বইটাতে লেখা পীযূশ পান্ডের কিছু মহামূল্যবান কথা মনে পড়লো। যেহেতু ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের কালচারাল কিছু মিল আছে তাই নিচে Pandeymonium বই থেকে প্রাসঙ্গিক কিছুটা অংশ বাংলায় অনুবাদ করে লিখলাম।

“ইন্ডিয়ার মুভিস্টার এবং ক্রিকেটারদের প্রতি একটা সুপ্রিম ফ্যাশিনেশন আছে। যার ফলে এখানের প্রতি তিনটা কমার্শিয়াল এর একটাতে এই দুইটা ক্যাটাগরির একটা ফিচার করা হয়।
যেটা আমাকে বিস্মিত করে তা হচ্ছে বহু কমার্সিয়াল যেগুলো সেলিব্রিটিদের ফিচার করে (স্পেশালি ক্রিকেটার) সেগুলো terrible.
এর কারণটা হচ্ছে এজেন্সি, ক্লায়েন্ট এবং ক্রিয়েটিভ মানুষজন একজন স্টারকে পাবার সাথে সাথেই তাদের মধ্যে আলসেমি ভর করে - তারা মনে করে তাদের কাজ শেষ!
আমি (পীযূশ পান্ডে) মুভি স্টার এবং ক্রিকেটারদের সাথে কাজ করে যা শিখেছি তা হচ্ছে ঠিক উলটো। যখন আপনি একজন বিখ্যাত পার্সোনালিটি পাবেন, তখন আপনাকে কমিউনিকেশন এর প্রতিটা দিকে নিয়ে দশ গুণ বেশি কাজ করতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে বেশিরভাগ ক্রিকেটাররা ভাল অভিনেতা না (যেরকম বেশিরভাগ অভিনেতা ভাল ক্রিকেটার না)! তাই তারা ইফেক্টিভলি ‘lines’ ডেলিভারি করতে পারে না।
বেশিরভাগ সেলিব্রিটির জন্য, একটা ক্যাম্পেইনে কাজ করা সিমপ্লি একটা transaction. তারা নির্দিষ্ট কিছুটা সময় দেবে, পারফর্ম করবে, চলে যাবে। যদি আপনি তার কাছ থেকে বেস্ট আউটপুট আনতে চান, তাহলে আপনাকে অসাধারণ একটা script তৈরি করতে হবে এবং তাকে এই ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে এক্সাইটেড করতে হবে।”
আমার (মার্ক অনুপম মল্লিক) কাছে পীযূশ পান্ডের কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, এবং সাকিবের সিরামিক এড সহ অন্যান্য অনেক সেলিব্রিটির এডেই এই গ্যাপটা দেখতে পেয়েছি।
অনেক সময়ই ব্র্যান্ড বা এজেন্সি সাকিবের মতো স্টারকে অনবোর্ড করতে পারলেই মনে করে শুধুমাত্র ফেইসভ্যালু দিয়ে কাজ হয়ে যাবে। যে পরিমাণ অর্থ, সময়, ইফোর্ট তারা একজন স্টারকে পেতে ব্যয় করে তার সিকিভাগ তারা একটা well crafted ক্যাম্পেইন ডিজাইন করতে, কপি লিখতে, স্ক্রিপ্ট লিখতে ব্যয় করে না।
শুধু ব্র্যান্ড বা এজেন্সি এই দোষে দুষ্ট তা না, এমনকি সেলিব্রিটিরা নিজেরাও প্রায়ই একই ভুল করে।
উদাহরণস্বরুপ, কিছুদিন আগে আমার আরেকটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়েছিল, যেখানে সাকিব আল হাসান তার নতুন স্বর্ণ ব্যবসার কথা ঘোষনা করছিলেন।

বিজ্ঞাপনটা দেখার পর আমি literally তিনবার নামটা চেক করেছি, এটা কি আসলেই সাকিব আল হাসান? ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান? আমাদের সাকিব?
না, সাকিব স্বর্ণ ব্যবসা শুরু করেছেন সেজন্য না। কিন্তু বিজ্ঞাপন এর ছবি, কালার, ব্র্যান্ডিং এবং কপিরাইটিং এতটাই নিম্নমানের ছিল যে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের কাছ থেকে কোন বিজ্ঞাপন এলে সেটা বিশ্বসেরা হবে আমি ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু এটা দেখে মনে হচ্ছিল নীলক্ষেতের ফটোকপির দোকানের টুকটাক কাজ জানা কোন গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে দিয়ে এক সন্ধ্যায় কপি করে বানানো অত্যন্ত সস্তা কোন লিফলেট।
অনেকটা ওভারব্রিজের নিচে জোর করে হাতে গুজে দেয়া কিংবা বাসের জানালা দিয়ে কোলের উপর ছুড়ে মারা কোন স্বপ্নে পাওয়া যৌনশক্তি বর্ধক যাদুকরী কবিরাজি ওষুধের লিফলেটের মতো!
কিসের কপিরাইটিং, কিসের কালার, কিসের ব্র্যান্ডিং, কিসের ল্যাঙ্গুয়েজ, কিসের কোয়ালিটি মার্কিটিং!
গুরু পীযূশ পান্ডের বই পড়ার পর বুঝতে পারলাম - সাকিবের মতো বিশ্বসেরা ক্রিকেটার আসলে মাঠে ভাল, কিন্তু তার কাছ থেকে কোয়ালিট মার্কেটিং আশা করাটা ঠিক হবে না।
ক্যাম্পেইন ফাটিয়ে দেবার কাজটা করতে হবে এজেন্সিকে, ব্র্যান্ডগুলোকে।
আর সেই সাথে সেলিব্রিটির ম্যানেজার এবং নিজস্ব টিমকে নিশ্চিত করতে হবে তার ব্র্যান্ড ভ্যালুটা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। শর্ট টাইমে কিছু কুইক মানি কামাতে গিয়ে বিতর্কিত কোম্পানির সাথে জড়িয়ে যেন বহুদিনের গড়ে তোলা পারসোনাল ব্র্যান্ডটা যেন থুবড়ে না পড়ে।
আমাদের দেশে অনেক রিসোর্সই লিমিটেড, সেলিব্রিটিও সংখ্যায় লিমিটেড। ব্র্যান্ডের সাথে জড়িত সবাই এই লিমিটেড রিসোর্সগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দিন দিন আরো ভাল রেজাল্ট বের করে আনুক এই প্রত্যাশা থাকলো।
“When you work with a celebrity, the viewer must find the celebrity, the script and the idea memorable, not just the celebrity.” Piyush Pandey